এবারে বিস্তারিত বলি কি এই পৌষ আগলানো প্রথা। বাঙালি সনাতন হিন্দু ধর্মে পৌষ মাস কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবচনা করা হয়েছে এই মাস কে লক্ষ্মী দেবীর প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই সময়ে গ্রামে চাষী দের ঘরে তাঁদের সোনার ফসল আসে। এছাড়া নতুন ফসল এর নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এই মাসে, বেশ কিছু জায়গায় সন্ধ্যে হলে তারা ঘরে শান্ত পরিবেশ বহন করেন এছাড়াও সন্ধ্যাকালীন ঘর থেকে টাকা পয়সা সংক্রান্ত কোন লেনদেন করেন না সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে জীবনযাত্রা কে একদম বদলে ফেলা হয় মূলত এই মাসে জীবনে সঞ্চয় এর বিষয়টি কে গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয়। আজও গ্রামে মহিলারা তাঁদের ইস্ট দেবতার পুজোর পড়ে যেমন নতুন শস্যের চালগুড়ো করে নবান্ন উৎসব করেন তেমনি পৌষমাসের সংক্রান্তির আগের দিন ঘরে ঘরে পিঠেপুলি যেমন করার রেওয়াজ আছে ঠিক তেমনি ঘরের মহিলারা ঘরের সুখ, সমৃদ্ধি, প্রতিপত্তি কে ধরে রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে রাত্রে বেলায় গ্রাম্য ছড়ার মধ্যে দিয়ে ঘরের উঠোনে চালগুড়ির মাধ্যমে শুভ প্রতীক একে তার মধ্যে গোবর এর গোলাকৃতি করে দূর্বা ও সিঁদুর দিয়ে সেটিকে শুভ চিহ্নএর মাঝে রেখে মন্ত্রের মতো বাংলার ঘরে কেউ বলেন এসো পৌষ , বসো পৌষ , না যেও ছাড়িয়ে / ছেলেপুলে ভাত খাবে সোনার থালা ভরিয়ে। কিম্বা ''পরের পৌষ একমাস / আমার পৌষ বারো মাস"। কিন্তু বর্তমান এ এই প্রথা কিছুটা হ্রাস পেলেও একটা সময়ে এই প্রথায় দেখা যেত সকাল থেকেই গোবর দিয়ে তকতকে করে নিকানো হত উঠোন বা গোবর জল ছিটানো হত । তারপর হরিমন্দির সহ বাড়ির প্রায় সর্বত্র আলপনা আঁকত মহিলারা এরপরে শুরু হত সাজো সাজো রব দিনভর বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করে যোগাড় করা হত বকনা গরুর গোবর , ধান-দূর্বা , সিঁদুর , ছোট ছোট খড়ের আঁটি , সরষে – গাঁদাফুল সহ আরও নানা উপকরণ।রাতে সবার খাওয়া-দাওয়ার পর শুরু হয় পৌঁষ আগলানো। পাট ভাঙা কাপড় পড়ে মহিলারা প্রথমে বাড়ির সদর দরজার মুখে বসে গোবর দিয়ে গোলাকার পৌষবুড়ি তৈরি করে তারপরে পৌষবুড়ির উপরে ধান-দুর্বা সহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে শুরু হত পৌষ আগালনো আর তখন সুর করে মহিলারা একসঙ্গে ছড়ার মতো বলত – ‘ এসো পৌষ , বসো পৌঁষ না যেও ছাড়িয়ে / ছেলেমেয়ে ভাত খাবে সোনার থালা ভরিয়ে । আবার কোথাও বলা হত ‘ পৌঁষমাস লক্ষী মাস যাইও না ছাড়িয়ে / ছেলেপিলেকে ভাত দেব থালা ভরিয়ে । এরপর একই ভাবে গোয়ালঘর , রান্নাঘর এবং ঠাকুরঘরেও পৌঁষ আগলানোর রীতি প্রচলিত আছে । তারপর সদর দরজা থেকে ঠাকুরঘর পর্যন্ত উলুধ্বনি সহ জলের ধারা পৌঁছে দেওয়ার পরই শেষ হয় পৌষ আগলানোর পর্ব।
0 মন্তব্যসমূহ