আনুমানিক 300 বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে আজকের "সগরভাঙ্গা " র বহু জনপ্রিয় চড়ক উৎসব । যার জন্য এলাকাবাসী প্রতি বছরের অপেক্ষায় থাকে অতি জাগ্রত বাবা ভৈরবনাথের এই গাজন এর উৎসব । ভক্তরা অতি আস্থা ,শুদ্ধতা , নিষ্ঠা সহকারে বাবার এই পূজায় নিয়োজিত হয় । এবছরের বাবার প্রধান ভক্তার সংখ্যা প্রায় 189 জন হলেও প্রায় লক্ষাধিক মানুষের প্রত্যক্ষ যোগ এই উৎসব কে কেন্দ্র করে । বাবা ভৈরব এতটায় জাগ্রত য়ে বাবার পূজা বাবা নিজেই সব জোগাড় করে নেন । বাবার ভক্তরা বাবার পূজায় যেমন নিষ্ঠাবান তেমনি অকৃপণ পুজার ব্যবস্থাপনায়। কয়েক দিন ভক্তা দের নিষ্ঠা আর তপস্যার পরে এবছর 13ই এপ্রিল সন্ধ্যে থেকে ভৈরব তলার বাবা ভৈরব নাথ কদম তলায় যখন তার বিশেষ পূজার জন্য উপস্থিত তার হাজারো ভক্তের মাঝে, সন্ধ্যা থেকে ঢাক ঢোলের শব্দ ভক্তদের আকুল প্রার্থনা মধ্য রাত্রে সবাই কে অবাক করে বাবার মহিমায় কদমফুল এর দর্শন এসব এই উৎসব এর প্রধান আকর্ষণ ।
গ্রাম বাংলায় একদিকে মনসাপুজা, নীল পূজা আর মহাদেব এর চড়ক বা গাজন উৎসব এই হলো আদি বাংলার ঐতিহ্য।

লাইট আর মেলায় ভক্তদের উপস্থিত চোখে পড়ার মতো । বছর অন্তে বাবার আশীর্বাদে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বাংলার আদি উৎসব গাজন উৎসবে উপস্থিত মানুষের ভিড় জানান দেয় বাবার মাহাত্ম্য ।
বর্তমানে এই গোপীনাথপুর গ্রামের জনবসতি পত্তনের কারিগর স্বর্গীয় গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় এর বংশধর সুব্রত চ্যাটার্জী ,উজ্জল চ্যাটার্জী,গব্বর চ্যাটার্জী,মানিক চ্যাটার্জী,রাজ চ্যাটার্জী, ভোলানাথ চ্যাটার্জী, তামোনাস চ্যাটার্জী সহ চ্যাটার্জী পরিবারের প্রমূখ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে পূজার জন্য গঠিত ট্রাস্ট এর মাধ্যমে ও ভক্তদের দানের উপর এই সমস্ত পূজা পরিচালিত হয়।
13 ই এপ্রিল বাবা ভৈরব নাথের ভক্তরা চড়ক তলায় চড়ক এর প্রমুখ অনুষ্ঠান এর সঙ্গে সঙ্গে এবছরের বাংলা নববর্ষের সূচনা হ্য়ে গেছে । আজ 14 ই এপ্রিল ভক্তদের সেবার দিন, এই কদিনের উপোষ বা ফলজল ভোজন এর পরে আজ কমিটির ব্যবস্থাপনায় হবে ভক্তাসেবা।
এবার একটু অতীতের কথা জানতে হবে কিভাবে হলো দুর্গাপুর ? ও কিভাবে এই ভৈরব নাথের পূজা হয় ?
বাবা ভৈরব নাথ সগরভাঙ্গা তে আসেন আনন্দপুর থেকে নডিহা হয়ে কিন্তু কেন বাবা আনন্দপুর থেকে এত নডিহা হয়ে এখানে আসেন ? আসলে প্রয়াত গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় ও দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায় এনাদের আদি বাসস্থান হলো আনন্দপুর তারপরে
"সগরভাঙ্গা " এই নামকরণ হবার কারন বলে জনশ্রুতি য়ে তৎকালীন বর্ধমান রাজার এই অঞ্চলের হিসাব রক্ষক বা এলাকা দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল স্বর্গীয় গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় এর উপড়ে । সেই সময় এই অঞ্চলের রাস্তা ঘাট ছিল বেশ কঠিন তাই সেই সময়ের প্রধান যানবাহন গরুর গাড়ির চাকা যাকে শুদ্ধ বাক্যে " সগর " বলা হয় সেটি এই অঞ্চলে ভেঙ্গে পড়ে আর তাই এই অঞ্চলের নাম হয় "সগরভাঙ্গা " । পরবর্তী কালে সগরভাঙ্গার গ্রামের নাম হয় স্বর্গীয় গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামে গোপীনাথপুর । আর তার পরে স্বর্গীয় গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বংশধর স্বর্গীয় দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায় এর নামে দুর্গাপুর এর নামকরণ হয় দুর্গাপুর ।
0 মন্তব্যসমূহ