দুর্গা প্রতিমা মৃন্ময়ী আর জলজ্যান্ত নারী চিন্ময়ী । নামকরা পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম চতুরঙ্গ সার্বজনীন দূর্গা পূজা । কাল নবমীর সন্ধ্যায় যখন চতুরঙ্গ ময়দান ও মন্ডপ প্রাঙ্গন লোকে লোকোময়, মন্ডপের সিঁড়ি তে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে দর্শণার্থীরা, ঠিক তখনই দুর্গা স্বরূপা এক মা মাটিতে বসে তার সদ্য জন্মানো তার এক মাসের সন্তান কে নিয়ে দু মুঠো খাবারের জন্যে হাহাকার করতে দেখা গেল। মৃন্ময়ী মাতৃ দর্শন করে বেরোনোর সময় চিন্ময়ী মা মলীন কাপড়ের বসনে উস্কো খুস্ক চুলের জলজ্যান্ত এক নারী শক্তি দুধের শিশু কোলে সাহায্যের জন্যে আহ্বান জানাচ্ছে শহরবাসীর কাছে। এই প্রতিবেদন কোন রাজনৈতিক বা কাউকে উদ্দেশ্যে করে না হলেও একটু মানবিক একটু মানুষিক।
এই সেই চতুরঙ্গ ময়দান যেখানে রাত্রি বেলায় এক নারী অভয়ার বিচারের জন্য জ্বলে উঠেছিল হাজারো মোমবাতি,আর আজ শারদীয়ার এই রাত্রে যখন দেবী শক্তির পূজার আনন্দে মানুষ নামী দামী রেস্টুরেন্ট এ পেট পুজো থেকে প্যান্ডেল হপিং এ আনন্দ করছে সেখানে বীরভূম এর পাড়ুই থেকে আসা 'মানকুড়ি কুর্মি' তার এক মাসের শিশু কে নিয়ে সাহায্য চাইছে, অসহয়তা ওদের চোখে মুখে । ওদের কি চোখে পড়েনি পূজা কমিটি থেকে সাধারণ মানুষের ? কেউ কি কিছু অর্থ,একটা নতুন বস্ত্র আর খোলা আকাশের শিশিরের থেকে বাঁচতে একটু আচ্ছাদন এর সাথে ভালোবাসা দিয়ে বলতে পারেনি, যে হে মাতৃ স্বরূপা এই শারদীয়ার আনন্দ উৎসবে তোমরাও একটু ভালো থেকো ? অসহায়তার জন্যে সাহায্যের হাত পেত না এই আনন্দ উৎসবে। হয়তো বন্যা বা আর্থিক দুরাবস্থা আজ ওদের প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো হাজার ওয়াটের আলোর মাঝে এক অন্য চিত্র তুলে ধরতে বাধ্য করেছে । কিন্তু ভালোবাসার শহর, সংস্কৃতির শহর দুর্গাপুর কি ওদের কে এক অন্য বার্তা দিতে পারত ?
একদিকে যখন মণ্ডপের সামনে চলছে গঙ্গা আরতির ন্যায় আরতি আর তা মোবাইল ক্যামেরা বন্দি করতে উৎসাহী মানুষের ভিড় ঠিক তখন মানুষের পায়ের নিচে শিশু গুলো ধুলোয় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তাঁদের অসহায় বাবা, মায়ের কোলে। দৃশ্য টা মানবিক হৃদয় কে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
লক্ষ লক্ষ টাকার পুজো হয়, আলোর রসনায় আলোকিত হয় কিন্ত ক্ষুধার্ত পেটে দু মুঠো অন্নএর জন্যে এগিয়ে আসা হাত টা অনেক প্রশ্ন অনেক ছবি এই সমাজের তুলে ধরে।
মানকুড়ি কুর্মি, কুবের কুর্মি এর মতো মানুষ গুলো আজ বিজয়ার এই সন্ধ্যে বেলায় শারদীয়ার শেষ লগ্নে হয়ত এইটুকু আশা নিয়ে বিজয়ার বিদায় চাইবে শহরবাসীর কাছে থেকে "একটু সাহায্য করো একটু পাশে থাকো "। পুজো শেষে পাশের জেলায় যখন ফিরে মোটা চালের ভাত হাড়িতে ফুটবে তাঁদের মলীন চোখে ভাসবে শহর দুর্গাপুর ভালো থেকো তোমরা।
0 মন্তব্যসমূহ